রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন
আবদুল আজিজ:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পালিত হয়েছে ঈদুল আযহা। সকাল ৮টা থেকে নয়টার মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পের কয়েকশত মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও এবং তাদের ব্যক্তিগতভাবে পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। এর আগে সরকারিভাবেও রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য পশু ঈদ সামগ্রীর ব্যবস্থাও করেছে। তবে করোনাকালিন সময়ে কোন ধরণের সামাজিক দুরুত্ব মানা হয়নি ঈদ জামাতে। মুখে মাক্স নেই, দেয়নি কোন হ্যানিটাইজার। ঈদের কোলাকুলী করেছে স্বাভাবিকভাবে।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে ৪র্থ বারের মতো বাংলাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপন করেছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত এসব অধিকাংশ রোহিঙ্গারা ভুলতে বসেছে স্বদেশের স্মৃতি। বিশেষ করে ঈদ আসলেই স্বদেশে ফেলে আসা ভিটে-বাড়ি, সহায় সম্পদ ও নানা নির্যাতনে স্মৃতির কথা বললেই চমকে উঠতে। কিন্তু, আজ অনেকটাই বদলেছে রোহিঙ্গাদের মানসিকতা। কোন ধরণের মানসিক চাপ ছাড়াও বাংলাদেশের মাটিতে এবারের ঈদুল আযহা উদযাপন করেছে রোহিঙ্গারা। এমনকি করোনার এই দু:সময়েও রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোন ধরণের পরিবর্তন হয়নি। সামাজিক দুরত্ব মানা তো দুরের কথা, মুখে মাক্স ও হ্যানিটাইজারেরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি জানান, ‘ঈদুল আজহার নামাজ ক্যাম্পে সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে এনজিওদের দেয়া কোরবানির পশু জবাইয়ের পর আমার আওতাধিন সকল রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আজ খুব খুশি’।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার সংলগ্ন বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘এক ব্যক্তি আমাদের দুই মাঝির জন্য একটি ছোট কোরবানির পশু দান করেছেন। এই পশু জবাইয়ের পর আনুমানিক ৮০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। এসব মাংস গুলো প্রায় ৪শ’ পরিবারের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়। এতে প্রতি পরিবার আড়াই শ’ গ্রাম করে পেয়েছে’।
একই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের দেশ মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে আমরা ভাল রয়েছি। মিয়ানমারের আমরা ভালভাবে নামাজ পড়তে পারেনি, কোরবান দিতে পারেনি। আজ আমরা বাংলাদেশে এসে সব কিছু করতে পারছি। এতে আমরা খুশি’।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবক আবু তাহের বলেন, ‘কোরবানির ঈদে আমরা খাওয়ার পরিমাণ কিছু মাংস পেলেও ক্যাম্প-১ এর সি-বøকের রোহিঙ্গারা মাংস বলতে চোখেও দেখেনি। কোন এনজিও এবং সংস্থা সেখানে গরুর মাংস বিতরণ করেনি’।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান জানান, ‘কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫টি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৪৫টি ও ২০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের জামাত আদায় করেছেন মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এতে কোন ধরণের অসুবিধা হয়নি’।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকের কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যথা সম্ভব মাংস বিতরণ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন থেকে ও ব্যক্তিগত ভাবেও কোরবানির পশু দান করা হয়েছে। পশুগুলো কোরবানির নামাজের পর পরই জবাই করে পরিমাণ মত মাংস বিতরণ করা হয়েছে’।
গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনা বাহিনীর কর্তৃক হত্যা, ধর্ষণ সহ নানা নির্যাতন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৯ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৬ সালে ৭৫ হাজার সহ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সে থেকে এখনো আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনী।
ভয়েস/আআ